
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমের বাইশফাঁড়ি সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হওয়া বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর নায়েক আক্তার হোসেন অবশেষে মৃত্যুবরণ করেছেন।
৩১ অক্টোবর (শুক্রবার) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই সন্তান এবং অসংখ্য সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন।
১১ অক্টোবর (রোববার) সকালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের বাইশফাঁড়ি সীমান্ত পিলার ৪০ নম্বরের কাছে নিয়মিত টহল দিচ্ছিলেন বিজিবির সদস্যরা। টহলের একপর্যায়ে সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় হঠাৎ একটি ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরিত হয়।
বিস্ফোরণে বিজিবি নায়েক আক্তার হোসেনের ডান পা সম্পূর্ণ উড়ে যায় এবং বাম পা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার সহকর্মীরা সঙ্গে সঙ্গে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। পরে হেলিকপ্টারযোগে তাকে প্রথমে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়।
দীর্ঘ ২০ দিন ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। চিকিৎসকরা তার অবস্থা স্থিতিশীল করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালান। কিন্তু পায়ে সংক্রমণ এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তার শারীরিক অবস্থা ক্রমেই অবনতির দিকে যায়। অবশেষে আজ দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন এই বীর সেনা সদস্য।
নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনাপূর্ণ। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের অভ্যন্তর থেকে প্রায়ই গুলিবর্ষণ, মর্টারশেল ও মাইন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সংঘর্ষ বেড়ে যাওয়ায় সীমান্তের বিভিন্ন স্থানে অব্যবহৃত মাইন পড়ে আছে। এই মাইন বিস্ফোরণেই আহত হন নায়েক আক্তার হোসেন।
বিজিবি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, দায়িত্ব পালনকালে দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করা নায়েক আক্তার হোসেনকে যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হবে।
বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেশের সীমান্ত নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালনকালে জীবন দিয়েছেন আমাদের এক সাহসী সদস্য। আমরা তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের পাশে আছি।
আক্তার হোসেনের মৃত্যুর খবর পৌঁছালে তার গ্রামের বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে আসে। স্বজন ও প্রতিবেশীরা বলেন, আক্তার হোসেন ছিলেন অত্যন্ত দায়িত্বশীল ও সাহসী একজন সৈনিক। তিনি সবসময় সীমান্তে নিজের দায়িত্ব পালনকে অগ্রাধিকার দিতেন।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের মাইন পরিস্থিতি এখন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে মিয়ানমারের দিক থেকে ছড়িয়ে পড়া পুরনো ও সক্রিয় মাইনগুলো শনাক্ত ও নিষ্ক্রিয় করতে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া জরুরি
 
  
  
  
  
  
  
  
  
 
পাঠকের মতামত